বন্ধুরা কেমন আছো তোমরা আশা করি সকলেই ভালো আছো। আজ আমরা একটু মহিলা বা মেয়েদের নিয়ে অর্থাৎ মেয়েদের সাস্থ নিয়ে কথা বলবো।মহিলাদের ওজন বা মেয়েদের ওজন বেড়ে যাচ্ছে সমস্যা তা কি করা যায় সেটাই আমরা একটু আলোচনা করবো। আলোচনা করবো ওজন কমানোর খাবার নিয়ে।
১ মাসে ১০ কেজি কিন্তু ওজন কমানো অসম্ভব নয়। কঠোর ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের মাধ্যেমে এটা করা যায়। আপনার মনও দেহ যদি এটা করতে পুরোপুরি সম্মতি না
দেয় তাহলে এটা চেষ্টা করাই ভাল। কেননা শুধু ৭-১০ দিন কষ্ট করার কোন মানে হয় না। আপনি বরং অন্যকোন পদ্ধতি অনুসরণ করুন। আপনি আজ শুরু করলে আজ থেকেই ওজন কমা শুরু করবে না। আপনার শরীরের এই খাদ্য তালিকা গ্রহণ ও মস্তিষ্ক ওজন কমানোর জন্য প্রস্তুত হলে, এটা কাজ করা শুরু করবে। শরীর ও মনকে এমন পর্যায়ে নিতে সময় লাগবে।
আমি এই ওজন কমানোর খাদ্য তালিকা অনুসরণ করে এক দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ গ্রাম কমিয়েছি। ভাববেননা প্রতিদিন ৫০০ গ্রাম করে কমবে। সারাদিনের ক্যালরি গ্রহণ ও খরচের উপর নির্ভর করে দিনে আপনার কত গ্রাম কমবে। এটা সাধারণ কথা। এখানে আরো কিছু ব্যাপার আছে। শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেশি হলে প্রথমে ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকবে।
তবে আমার কঠোর নির্দেশ না খেয়ে থাকবেন না। আর আপনার যদি শারীরিক কোন সমস্যা থাকে বা যদি আপনি কোন ডাক্তারের নির্দেশনায় থাকেন,তাহলে এটা অনুসরণ করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। এই ওজন কমানোর খাদ্য তালিকার সাথে সম্পূর্ণ ফলাফল পেতে ব্যায়ামও করতে হবে। চলুন দেখে নেই আমার ১ মাসে দশ কেজি ওজন কমানোর খাবার তালিকা।
সকাল মানেই ৯-১০ টা নয়। সকাল ৬টায় উঠতে হবে। সকালের আবহাওয়ায় কিছু স্বাস্থ্যকর উপাদান থাকে। যেমন সকালের রোদে ভিটামিন ডি শরীরের জন্য অনেক উপকারি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে এক গ্লাস মধু দিয়ে লেবু জল পান করতে হবে। একটা মাঝারি সাইজের লেবুর অর্ধেক রস এক গ্লাস জলের মধ্যে দেবেন। সাথে এক চা চামচ অরগানি মধু মিশিয়ে পান করবেন। শীতকালে কুসুম গরম জল দিয়ে পান করবেন। আমি সকালে উঠে খালি পেটে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা জগিং করতাম। ফিরে এসে এই পানীয় খেতাম। এর সাথে আধা চামচ কালো জিরার তেল মিশিয়ে খেতে পারলে আরো ভাল।
সকালের নাস্তা মানে ৮ টার দিকে একটি সবুজ আপেল (Green Apple) অথবা কমলা অথবা দুইটি ছোট সাইজের কলা। সপ্তাহে চার দিন এসব খাবেন। বাকি দুই দিন একটা পাতলা রুটি অথবা চিনি ছাড়া বাকড়খানি খাবেন সাথে একটি কলা দিয়ে। বাকি একদিন একটি ডিম অথবা একগ্লাস দুধ চিনি ছাড়া। যেদিন দুধ ডিম খাবেন, সাথে একটি কাঁচা শসা অথবা গাঁজর খাবেন।
সকালের নাস্তা পর ১০.৩০ টায় অল্প তেলে রান্না করা নানা পদ মেশানো শাক সবজি (Mixed Vegetables) বড় কাপের ১ কাপ পরিমাণ খাবেন। সপ্তাহে দুই দিন ছোট স্যুপ খাওয়ার বাটির এক বাটি ডাল খাবেন। বেশি ক্ষুদা লাগলে সবজি বা ডালের সাথে অল্প কিছু মুড়ি মিশিয়ে খেতে পারেন। অথবা ৩-৪ টেবিল চামচ ওটমিল ভেজানো কিছমিছ বা খেজুর দিয়ে খেতে পারেন। আমি রাতের ঘুমানোর আগে ২-৩ টা খেজুর এবং ২০-২৫ টা কিছমিছ ভিজিয়ে রাখতাম।
দুপুরে (২ টার সময়) মাঝারি সাইজের বাটির এক বাটি শাক সবজির সাথে ডাল মিশিয়ে খাবেন। মিক্সড সবজি খাওয়া সবচেয়ে ভাল। তাহলে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল পাচ্ছেন। আর সবজিতে থাকে প্রচুর ফাইবার যা, হজমে সহায়তা করে এবং শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। সবজি রান্না করার ক্ষেত্রে তেল খুব সামান্য দেবেন। আর তেলে পেয়াজ ভেজে রান্না করবেন না। সবজি পুরোপুরি সিদ্ধ করবেন না। আধা সিদ্ধ সবজিতে পুষ্টিগুণ অটুট থাকে।
শাক সবজির মধ্যে বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, গাঁজর, শষা, বেগুন, মূলা, শিম, পটল, করলা, শালগম, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, পুঁই শাক, মূলা শাক, লাউ শাক, সরিষা শাক, ইত্যাদি ওজন কমানোর জন্য অনেক উপকারি। অধিক ক্ষুদা লাগলে সপ্তাহে দুইদিন ১ কাপ করে ভাত খাওয়া যাবে। তবে আমি ১৫-২০ দিন পর পর ভাত খেতাম। হ্যা এটা সত্যি যে ভেতো বাঙালিদের অনেকটাই সমস্যা।
সপ্তাহে ১-২ দিন মুরগির মাংস খেতে হবে। তবে শুধুমাত্র মুরগির বুকের মাংস (Chicken Breast)। আপনি একটা মুরগির বুকের অর্ধেক খেতে পারবেন। আমি সপ্তাহে একদিন মুরগির বুকের অংশের কোয়ার্টার (চার ভাগের এক ভাগ) গ্রিল (Chicken Grill) সাথে একটা সাদা নান (Plain Nun) রুটি খেতাম। সপ্তাহে দুই দিন মাছ খেতে হবে। অতিরিক্ত তেলযুক্ত মাছ খাবেন না। বড় মাছ খেলে এক পিস সবজির সাথে নিয়ে খাবেন। সবজি দিয়ে মাছের তরকারি বা শাক দিয়ে মাছের তকরারি খুব উপাদেয়।
বিকেল ৪টায় ২০-৩০টি ভেজানো ছোলা অথবা ৩-৪ টি খেজুর অথবা একটি কলা। সকালে কলা খেলে বিকেলে অন্যকিছু খাবেন। তবে মেয়েরা এই ১ মাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট অনুসরণ করার চলাকালীন পিরিয়ডের সময় দিনে ২-৩টা কলা অবশ্যই খাবেন। কলাতে প্রচুর আয়রন আছে যেটা পিরিয়ডের সময় বেশি বেশি খাওয়া উচিত। তবে শরীর বেশি দুর্বল হলে ডায়েট করা বাদ দিন। এসবের সাথে চিনি ছাড়া চা খেতে পারেন। আমি সন্ধ্যায় ব্যায়াম করতাম তাই বিকেলে ব্যায়াম করতে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এসব খেতাম।
রাত ৭ টায় একগ্লাস লেবু জল । সকালের বাকি অর্ধেক লেবুর রস এক গ্লাস জলে মিশিয়ে পান করুন। আমি ব্যায়াম করে এসে রাত ৮ এর সময় লেবু জল খেতাম। ৯ মিনিটে রাতের খাবারে আবার সবজি খাবেন। ২০০ গ্রাম পরিমাণ মিক্সড সবজি অথবা শাক রান্না খেতে হবে। বেশি ক্ষুদা লাগলে সাথে দুই মুঠ মুড়ি খেতে পারেন। রাত ১২ টার মধ্যে ঘুমিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, রাতের অবশ্যই রাতে খাওয়ার ৩ ঘণ্টা পর ঘুমাতে হবে।
সারাদিন প্রচুর জল খেতে হবে। আমি তখন দিনে ৭-৮ লিটার জল খেতাম। আমার পেট ভোরেই রাখতাম জল দিয়ে। খাবার যা খেতাম বেঁচে থাকার জন্য ? ।
ওজন কমানোর এই খাদ্য তালিকা অনুসরণের পাশাপাশি আমি সকালে ও সন্ধ্যায় ব্যায়াম করতাম। এই ডায়েট চলাকালীন ওজনবাহি বা ওয়েট লিফটিং কোন ব্যায়াম করা যাবে না। ফ্রি হ্যান্ড এবং কার্ডিও ব্যায়াম করতে হবে।
সতর্কতা
1. প্রাকৃতিক খাবার ছাড়া বাইরের কোন তৈরি খাবার খাওয়া যাবে না।
2. মিষ্টি জাতীয় যে কোন খাবার শতভাগ এড়িয়ে চলতে হবে।
3. তেলে চুবিয়ে ভাজা যে কোন খাবার, হোক সেটা বাসায় বানানো খাওয়া যাবে না।
4. আগে কখনো কোন ডায়েট চার্ট ফলো না করে থাকলে। শুরু থেকেই ওজন কমানোর এই ডায়েট চার্ট অনুসারন না করাই ভাল। আপনি শুরুতে ধীরে ধীরে খাবার কমিয়ে এটাকে শেষ লক্ষ্য হিসেবে রাখুন।
শেষ কথা
অসুস্থ শরীরে এটা অনুসরণ করবেন না। অথবা এটা অনুসরণ করার সময় অসুস্থ হলে জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন এবং এটা জানাবেন। তবে এটা অনুসরণের সময় কোনো সমস্যা হয়েছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।
source:chalokolkata.com
Labels: WIEGHT LOSS
0 Comments:
Post a Comment
Subscribe to Post Comments [Atom]
<< Home